বচন কাকে বলে? বচন কয় প্রকার ও কি কি?
1. বচন কাকে বলে?
উত্তর:- বচন হল এমন এক ঘোষক বাক্য যা সত্য অথবা মিথ্যা হতে পারে তাকে আমরা বচন বলে থাকি।
আবার এরকম ভাবও বলা যেতে পারে দুটি পদের মধ্যে কোনো একটি সম্বন্ধের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতিকে বলা হয় বচন।
যেমন- সকল মানুষ হয় মরণশীল।
এখানে মানুষ হল উদ্দেশ্য পদ এবং মরণশীল হল বিধেয় পদ।
2. বচন কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তর:- সম্বন্ধ অনুযায়ী বচনকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
১) নিরপেক্ষ বচন
২) সাপেক্ষ বচন
3. নিরপেক্ষ বচন কাকে বলে?
উত্তর:- যে বচনগুলি কোনপ্রকার শর্ত থাকে না অর্থাৎ, শর্ত ছাড়াই প্রকাশিত হতে পারে।
আবার বলা যেতে পারে যে বচনগুলি প্রকাশিত হওয়ার জন্য উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ দুটি কোন শর্তের উপর নির্ভরশীল হয় না তাকে নিরপেক্ষ বচন বলে।
যেমন-
পাতা হয় সবুজ।
4. সাপেক্ষ বচন কাকে বলে?
উত্তর:- যে বচনগুলি শর্ত থাকে অর্থাৎ, শর্ত ছাড়া প্রকাশিত হতে পারে না।
অর্থাৎ, যে বচনগুলি প্রকাশিত হওয়ার জন্য উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ দুটি কোন না কোন শর্তের উপর নির্ভরশীল হয় তাকে সাপেক্ষ বচন বলে।
যেমন-
যদি রাম আসে তবে আমি যাব।
এখানে শর্ত হলো যে - যদি রাম আসে এই শর্তের উপর নির্ভরশীল আমার যাওয়াটা।
5. গুন অনুসারে বচনকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি?
উত্তর:- গুন অনুসারে বচনকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় -
১) সদর্থক বচন (হ্যাঁ বাচক) ২) নঞর্থক বচন (না বাচক)
6. সদর্থক বচন কাকে বলে?
উত্তর:- যে বচনে উদ্দেশ্য পদটি বিধেয় পদ সম্পর্কে কোন কিছু স্বীকার করে তাকে সদর্থক বচন বলে।
যেমন-
সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব।
সদর্থক বচন হল A বচন ও I বচন।
7. নঞর্থক বচন কাকে বলে?
উত্তর:- যে বচনে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে কোন কিছু অস্বীকার করে তাকে নঞর্থক বচন বলে।
যেমন-
কোনো মানুষ নয় অমর।
নঞর্থক বচন হল E বচন ও O বচন।
8. পরিমান অনুসারে বচনকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর:- পরিমান অনুসারে বচনকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় -
১) সামান্য বচন ২) বিশেষ বচন
9. সামান্য বচন কাকে বলে?
উত্তর:- যে বচনে বিধেয় পদটি সমগ্র উদ্দেশ্যপদ সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে সামান্য বচন বলে।
যেমন-
সকল কবি হয় ভাবুক।
সামান্য বচন হল A বচন ও E বচন।
10. বিশেষ বচন কাকে বলে?
উত্তর:- যে বচনে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্যপদের কিছু আংশিক বা অনির্দিষ্ট সম্পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করে তাকে বিশেষ বচন বলে।
যেমন-
কোন কোন আম হয় মিষ্টি।
বিশেষ বচন হল I বচন ও O বচন।
11. গুণ ও পরিমানে অনুসারে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি?
উত্তর:- গুণ ও পরিমানে অনুসারে নিরপেক্ষ বচন চার প্রকার।
যথা -
(i) সামান্য সদর্থক বচন বা A বচন
(ii) সামান্য নঞর্থক বচন বা E বচন
(iii) বিশেষ সদর্থক বচন বা I বচন
(iv) বিশেষ নঞর্থক বচন বা O বচন
বচনের বৈশিষ্ট্য:-
1) বচনের মূল উৎস হল বাক্য । বাক্যকেই বচনের উপাদান । বাক্য ছাড়া বচনের কোনো অস্তিত্বই নেই ।
2) প্রত্যেকটি বচনের একটি উদ্দেশ্য এবং একটি বিধেয় থাকে । শুধুমাত্র উদ্দেশ্যকে নিয়ে অথবা শুধুমাত্র বিধেয়কে নিয়ে বচন গঠিত হতে পারে না ।
3) যে-কোনো বাক্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয়র মধ্যে একটি সব্মন্ধকে ঘোষণা করা হয়ে থাকে ।
4) উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের সম্বন্ধকে দুভাবে স্থাপন করা যেতে পারে। যেমন সদর্থকভাবে আর নঞর্থকভাবে।
5) উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের মধ্যে যে সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত হয়, তা শর্তসাপেক্ষভাবেও হতে পারে , আবার শর্তহীনও হতে পারে । অর্থাৎ , দুই-ই হতে পারে ।
6) যে-কোনো বচনই যুক্তির উপাদান বা অবয়বরূপে গন্য হতে পারে । কারণ , যুক্তি গঠিত হয় শুধুমাত্র বচন দিয়েই । সেকারণেই বচনগুলি যুক্তির অংশরূপে বিবেচিত ।
7) বচনের প্রকৃতি ওপরই যুক্তির স্বরূপ নির্ভর করে তাই বচন হল যুক্তির প্রকৃতি নির্ণায়ক । অর্থাৎ , বচন ছাড়া যুক্তি নির্ণয় করা যায় না ।
8) সমস্ত বচনই বাক্যরুপে গন্য হলেও, সমস্ত বাক্যকে কখনোই বচনের মর্যাদা দেওয়া যায় না ।
9) বচনের সঙ্গে সত্যতার প্রশ্নটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত । কারণ , প্রত্যেকটি বচনই হয় সত্যরূপে গন্য হবে অথবা মিথ্যারুপে গন্য হবে । সত্য ও মিথ্যা হওয়া ছাড়া বচনের আর তৃতীয় কোনো শর্ত নেই ।
10) বচনের সত্যতার ওপর যুক্তির বৈধতা নির্ভরশীল অর্থাৎ ,বচনের সত্য-মিথ্যার সাহায্যেই যুক্তির বৈধতা নির্ণয় করা যেতে পারে ।
11) বচনের প্রয়োগক্ষেত্রে বাক্যের প্রয়োগ ক্ষেত্র অপেক্ষা অনেক কম কারণ, বচনকে আমরা শুধুমাত্র তর্কবিদ্যার যুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকি । আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারিক জীবনে এর কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না ।