অব্যাপ্য হেতু দোষ ও চারি পদঘটিত দোষ কখন ঘটে ?
① নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম কাকে বলে ?
অথবা , নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম কি ?
✍ নিরপেক্ষ ন্যায় নিয়ম:- ন্যায়ের নিয়ম অনুযায়ী যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হয়নি , সেই পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না । অর্থাৎ , সিদ্ধান্তে যদি কোনো পদ ব্যাপ্য হয়, তাহলে সেই পদকে অবশ্যই তাকে আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হতে হবে ,এই নিয়মকে বলা হয় নিরপেক্ষ ন্যায় ।
যেমন :-
প্রধান আশ্রয়বাক্য :- "A" - সকল শিক্ষিত মানুষ হয় সাম্যবাদী।
অপ্রধান আশ্রয়বাক্য :- "A" - সকল উদার মানুষ হয় শিক্ষিত মানুষ ।
সিদ্ধান্ত :- "A" - সকল উদার মানুষ হয় সাম্যবাদী ।
ব্যাখ্যা:-
দোষ:- এই অনুমানটিতে কোনো দোষ নেই , অর্থাৎ শুদ্ধ ন্যায় ।
এই অনুমানটি বৈধ কারণ , এটি ন্যায়ের সকল নিয়ম পালন করেছে । এখানে হেতুপদ (M) হলো - "শিক্ষিত মানুষ" এই পদটি প্রধান আশ্রয়বাক্যে A বচনে উদ্দেশ্য স্থানে থাকার কারণে এই পদটিকে একবার ব্যাপ্য করেছে তাই ন্যায়ের একটি নিযয় পালন করেছে। সাধ্যপদ (P) হলো - "সাম্যবাদী" এই পদটি প্রধান আশ্রয়বাক্যে A বচনে বিধেয় স্থানে থাকার ফলে এই পদটিকে ব্যাপ্য করে নি ।
পক্ষপদ (S) হলো - "উদার মানুষ" এই পদটি অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে A বচনে উদ্দেশ্য স্থানে থাকার ফলে এই পদটিকে ব্যাপ্য করেছে । আবার হেতুপদ (M) হলো - "শিক্ষিত মানুষ" এই পদটি অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে A বচনে বিধেয় স্থানে থাকার ফলে এই পদটিকে ব্যাপ্য করে নি ।
সিদ্ধান্ত A বচন হয়েছে । কারণ দুটি সদর্থক আশ্রয়বাক্য থেকে একটি সদর্থক সিদ্ধান্ত বের হবে ন্যায়ের নিয়মে বলা হয়েছে ।
পক্ষপদ (S) হলো - "উদার মানুষ" এই পদটি সিদ্ধান্তে A বচনে উদ্দেশ্য স্থানে থাকার ফলে এই পদটিকে ব্যাপ্য করেছে । আবার সাধ্যপদ (P) হলো - "সাম্যবাদী" এই পদটি সিদ্ধান্তে A বচনে বিধেয় স্থানে থাকার ফলে এই পদটিকে ব্যাপ্য করে নি ।
- অব্যাপ্য হেতু দোষ ।
- চতুষ্পদঘটিত দোষ ।
- অবৈধ সাধ্য দোষ ।
- অবৈধ পক্ষ দোষ কখন হয় ? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
- নঞর্থক আশ্রয়বাক্যজনিত দোষ কখন হয় ? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
② অব্যাপ্য হেতু দোষ এবং চতুষ্পদঘটিত দোষ কখন হয় ? উদাহরণ ব্যাখ্যা করো ।
অথবা , উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো : (i) অব্যাপ্য হেতু দোষ । (ii) চতুষ্পদঘটিত দোষ ।
✍ অব্যাপ্য হেতু দোষ (Fallacy of Undistributed Middle):- ন্যায় অনুমানের তৃতীয় নিয়ম - হেতুপদকে উভয় আশ্রয়বাক্যে বা যুক্তিবাক্যে মধ্যে অবশ্যই একবার অন্ততঃ ব্যাপ্য হতেই হবে । এই মিময় লঙ্ঘন করলেই এই দোষ দেখা দেবে, এই দোষকে বলা হয় অব্যাপ্য হেতু দোষ ।
যেমন :-
প্রধান আশ্রয়বাক্য :- "A" - সকল হরিণ হয় তৃণভোজী ।
অপ্রধান আশ্রয়বাক্য :- "A" - সকল ছাগল হয় তৃণভোজী ।
সিদ্ধান্ত :- "A" - সকল ছাগল হয় হরিণ ।
ব্যাখ্যা:-
দোষ:- অব্যাপ্য হেতু দোষে দুষ্ট ।
এই অনুমানটি বৈধ নয় কারণ , এটি অব্যাপ্য হেতু দোষে দুষ্ট । এখানে হেতুপদ হল "তৃণভোজী" উভয় আশ্রয়বাক্যেই বা যুক্তিবাক্যেই A বচনের বিধেয় স্থানে আছে । বিধেয় স্থানে অবস্থান করার জন্য ব্যাপ্য হয় নি । কারণ , A বচন শুধুমাত্র উদ্দেশ্যকেই ব্যাপ্য করে । বিধেয় পদকে ব্যাপ্য করে না । আমাদের ন্যায়ের তৃতীয় নিয়মে বলা হয়েছিল যে - হেতুপদকে উভয় আশ্রয়বাক্যে বা যুক্তিবাক্যে মধ্যে অবশ্যই একবার অন্ততঃ ব্যাপ্য হতেই হবে । এই মিময় লঙ্ঘন করলেই এই দোষ দেখা দেয় । তাই অনুমানটিতে অব্যাপ্য হেতু দোষে দুষ্ট ।
✍ চতুষ্পদঘটিত দোষ (Fallacy of Four Terms):- ন্যায় অনুমানের দ্বিতীয় নিয়ম হল - তিনটি পদ থাকবে (প্রতিটি পদ দুবার ব্যবহার হবে) । এর বেশি পদ থাকলে চারিপদ বা চতুষ্পদঘটিত দোষে দুষ্ট হবে এবং এই দোষকে চারিপদ বা চতুষ্পদঘটিত দোষ বলে ।
যেমন :-
প্রধান আশ্রয়বাক্য :- "A" - সেনাপতি হন এমন যিনি সৈন্যদের শাসক ।
অপ্রধান আশ্রয়বাক্য :- "A" - সেনাপতির স্ত্রী হন সেনাপতির শাসক ।
সিদ্ধান্ত :- "A" - সেনাপতির স্ত্রী হন সৈন্যদের শাসক ।
ব্যাখ্যা:-
দোষ:- চারিপদে দোষে দুষ্ট ।
এই ন্যায় অনুমানটি অবৈধ , কারণ চারিপদ দোষে দুষ্ট । এখানে চারটি পদ ব্যবহার করা হয়েছে । -
(i) "সেনাপতি"
(ii) "সেনাপতির স্ত্রী"
(iii) "এমন যিনি সৈন্যদের শাসক"
(iv) "সেনাপতির শাসক"
আমাদের ন্যায়ের দ্বিতীয় নিয়মে বলা হয়েছিল যে - তিনটি পদ থাকবে (প্রতিটি পদ দুবার ব্যবহার হবে) । এর বেশি পদ থাকলে চারিপদ বা চতুষ্পদঘটিত দোষে দুষ্ট হবে । এই মিময় লঙ্ঘন করলেই এই দোষ দেখা দেয় । তাই অনুমানটিতে চারিপদ দোষে দুষ্ট ।
③ অবৈধ সাধ্য দোষ কখন হয় ? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
✍ অবৈধ সাধ্য দোষ (Fallacy of Illicit Major) :- ন্যায় অনুমানে সাধ্যপদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয় , তাকে যে দোষ দেখা দেয় তাকে অবৈধ্য সাধ্য দোষ বলে ।
যেমন :-
প্রধান আশ্রয়বাক্য :- "A" - সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব ।
অপ্রধান আশ্রয়বাক্য :- "E" - কোনো দেবতা নয় মানুষ ।
সিদ্ধান্ত :- "E" - কোনো দেবতা নয় মরণশীল জীব ।
ব্যাখ্যা:-
দোষ:- অবৈধ সাধ্য দোষে দুষ্ট ।
এই ন্যায় অনুমানটি অবৈধ , কারণ অবৈধ সাধ্য দোষে দুষ্ট । এখানে এই যুক্তিতে সাধ্যপদ হলো - "মরণশীল জীব" প্রধান আশ্রয়বাক্যে A বচনের বিধেয় হওয়ার জন্য ব্যাপ্য হয়নি। কারণ হলো A বচন শুধুমাত্র উদ্দেশ্যকে ব্যাপ্য করে । কিন্তু সিদ্ধান্তে সাধ্যপদটিকে ব্যাপ্য করেছে । কারণ হলো সিদ্ধান্ত E বচন হওয়ার কারণে E বচন উভয়্পদকে ব্যাপ্য করে অর্থাৎ , উদ্দেশ্য (দেবতা) ও বিধেয় (মরণশীল জীব) পদকেই ।
এই কারণেই যুক্তিটি ন্যায়ের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে । আমাদের নিয়মে বলা হয়েছিল - যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য নয় , সে পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না । এই নিয়ম লঙ্ঘন করার জন্য যুক্তিটি অবৈধ সাধ্য দোষে দুষ্ট।
④ অবৈধ পক্ষ দোষ কখন হয় ? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
✍ অবৈধ পক্ষ দোষ (Fallacy of Illicit Minor) :- ন্যায় অনুমানে পক্ষপদ (S) অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে বা পক্ষ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হলে অবৈধ পক্ষ দোষ দেখা দেয় , সেই দোষকে বলা হয় অবৈধ পক্ষ দোষ ।
যেমন :-
প্রধান আশ্রয়বাক্য :- "E" - কোনো মানুষ নয় দেবতা ।
অপ্রধান আশ্রয়বাক্য :- "A" - সকল মানুষ হয় প্রাণী ।
সিদ্ধান্ত :- "E" - কোনো প্রাণী নয় দেবতা ।
ব্যাখ্যা:-
দোষ:- অবৈধ পক্ষ দোষে দুষ্ট ।
এই যুক্তির পক্ষপদ হলো - "প্রাণী" অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে A বচনের বিধেয় স্থানে থাকার জন্য ব্যাপ্য হয়নি । কারণ A বচন শুধুমাত্র উদ্দেশ্য পদকে ব্যাপ্য করে । বিধেয় পদকে ব্যাপ্য করে না । কিন্তু সিদ্ধান্তে এখানে পক্ষ পদটি ব্যাপ্য করেছে । কেন-না E বচন হওয়ার কারণে উভয় পদকে ব্যাপ্য করে। অর্থাৎ , "প্রাণী" ও "দেবতা" পদ দুটিকেই ব্যাপ্য করেছে । সিদ্ধান্তে প্রাণী পদটিকে ব্যাপ্য করার কারনেই এই দোষ দেখা দিয়েছে ।
⑤ নঞর্থক আশ্রয়বাক্যজনিত দোষ কখন হয় ? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো ।
✍ নঞর্থক আশ্রয়বাক্যজনিত দোষ (Fallacy of Negative Premises) :- ন্যায় অনুমানের দুটি আশ্রয়বাক্যই নঞর্থক হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হবে না , যদি সিদ্ধান্ত নিঃসৃ তাহলে এই দোষ দেখা দেবে একে বলা হয় নঞর্থক আশ্রয়বাক্যজনিত দোষ ।
যেমন :-
প্রধান আশ্রয়বাক্য :- "E" - কোনো প্রাণী নয় সুখী ।
অপ্রধান আশ্রয়বাক্য :- "E" - কোনো মানুষ নয় সুখী ।
সিদ্ধান্ত :- "E" - কোনো মানুষ নয় প্রাণী ।
ব্যাখ্যা:-
দোষ:- নঞর্থক আশ্রয়বাক্যজনিত দোষে দুষ্ট ।
এখানে দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত বেরিয়েছে । কিন্তু দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত টানা যায় না বা পাওয়া যায় না । কারণ , পক্ষ পদ "মানুষ" ও সাধ্য পদ "প্রাণী" এর সঙ্গে হেতুপদ "সুখী" এর কোনো সম্বন্ধ স্থাপিত হয়নি ।
তাই এই যুক্তিটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্যজনিত দোষে দুষ্ট ।
দারুন হচ্ছে দাদা, আপনি এইয়ে যান,। আমরা আপনার পাশে আছি।